আগাম মুলা চাষের পূর্ণাঙ্গ গাইড: মাটি প্রস্তুতি থেকে ফলন পর্যন্ত

জানুন কীভাবে আগাম মুলা চাষ করবেন মাটি প্রস্তুতি থেকে শুরু করে জাত নির্বাচন, সার ব্যবস্থাপনা, সেচ এবং ফলন পর্যন্ত। আগাম মুলা চাষে লাভবান হোন সঠিক পদ্ধতিতে।
মাটি প্রস্তুতি
মুলা চাষের জন্য সবচেয়ে উপযোগী মাটি হলো দোআঁশ ও বেলে দোআঁশ মাটি। মাটিতে পর্যাপ্ত জৈব সার ও প্রয়োজনীয় রাসায়নিক সার মিশিয়ে উঁচু জমিতে চাষ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়।
আগাম মুলা চাষ, জনপ্রিয় জাতসমূহ
বাজারে বর্তমানে যেসব জাত কৃষকদের মধ্যে জনপ্রিয়: বীজ ঘর ১ , এভারেস্ট, কেটিএক্স-৭২৬, এক্সএল-৩৫, কারিশমা-৩৩, হোয়াইট গোল্ড-৪০, সুফলা-৪০, চায়না-৩৫, আরএক্স-৩৫, আরএস-৪২৬, হোয়াইট চ্যাম্পিয়ন-৩৭, এসআরটি-১১, তাসাকীসান, পিংকি, দ্রুতি, হোয়াইট কিং, এসকিউ-৩৫ এবং হোয়াইট টপ ইত্যাদি।
বীজ বপনের সময়
- প্রধান মৌসুম: আশ্বিন থেকে কার্তিক (মধ্য-সেপ্টেম্বর – মধ্য-নভেম্বর)
- আর্লি ট্রাই: অনেক কৃষক ভাদ্র মাসেও মুলা বপন করে ভালো লাভ করছেন।
বপনের নিয়ম
- বীজ বপনের গভীরতা: ১ সে.মি
- দূরত্ব: সারি থেকে সারি: ৩০ সে.মি, গাছ থেকে গাছ: ১৫ সে.মি।
- বীজহার: শতক প্রতি: ২০ গ্রাম (মূলা হিসেবে), ১২০ গ্রাম (শাক হিসেবে)।
- বিঘা প্রতি (৩৩ শতক): ৬৬০ গ্রাম (মূলা), ৪ কেজি (শাক)
সারিতে বপন করলে বীজ কম লাগে এবং পরিচর্যা সহজ হয়।
সারের পরিমাণ (প্রতি শতকে)
সার পরিমাণ: গোবর ৪৫ কেজি, ইউরিয়া ১২০০ গ্রাম, টিএসপি ১০০০ গ্রাম, এমওপি ৯০০ গ্রাম এবং বোরন ৪০ গ্রাম।
সার প্রয়োগ পদ্ধতি
- চাষের সময়: গোবর, টিএসপি, বোরন, ইউরিয়া ও এমওপি-র অর্ধেক প্রয়োগ।
- পরবর্তী কিস্তি: বাকি ইউরিয়া ও এমওপি বীজ বপনের ৩য় ও ৫ম সপ্তাহে ভাগ করে প্রয়োগ।
পাতলাকরণ
বপনের ৭–১০ দিন পর একাধিক চারা উঠলে, ৩০ সে.মি দূরত্বে একটি সুস্থ গাছ রেখে বাকি উঠিয়ে ফেলতে হবে।
সেচ ব্যবস্থাপনা
- প্রথম সেচ: বপনের ৭–১০ দিনের মধ্যে (যদি মাটিতে রস কম থাকে)।
- পরবর্তী: প্রতি ১৫ দিন পর ২–৩ বার সেচ।
আগাছা দমন
নিড়ানি দিয়ে আগাছা তুলে মাটির চটা ভেঙে দিতে হবে। আগাছামুক্ত জমি গাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
ফসল সংগ্রহ
- শাক হিসেবে: বপনের ১৫–২০ দিন পর।
- মূলা হিসেবে: বপনের ৩৫–৪০ দিনের মধ্যে।
মুলা বেশি দিন জমিতে রাখলে আঁশ হয়ে যায়, তাই কচি থাকতেই তুলতে হবে।
ফলনঃ প্রতি শতকে: ২৮০–৩০০ কেজি।
উপসংহার
মুলা একটি লাভজনক ও স্বল্প-মেয়াদি ফসল। পরিকল্পিতভাবে মাটি প্রস্তুতি, সঠিক জাত নির্বাচন, বীজ বপন ও সারের প্রয়োগ করলে আপনি আগাম মুলা চাষ থেকে ভালো আয় করতে পারেন।
মোঃ ফরিদুল ইসলাম, উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা, কালিগঞ্জ, লালমনিরহাট ফেসবুক থেকে নেওয়া।